
আমরা সবাই চাই আমাদের ওজনটা খুব সুন্দর থাকুক, ভাল থাকুক। বাড়তি ওজন মানেই বাড়তি ঝামেলা, বাড়তি টেনশন। ওজন বেড়ে গেলে ওজন কমানোর জন্য আমরা বিস্তর খাটাখাটনি করে থাকি। ওজন বেড়ে গেলে শরীরের ভেতর নানা ধরনের রোগ বাসা বাঁধতে শুরু করে। আমরা ওজন বেড়ে যাওয়া কে রোগের কারণ মনে করতাম কিন্তু ডঐঙ ওজন বেড়ে যাওয়া কে একধরনের রোগ বলে আখ্যায়িত করেছে।
ওজন বেড়ে যাওয়ার ক্ষতিকর দিক গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো : উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, হাড়ের সন্ধিস্থল ক্ষয় হওয়া, ডায়াবেটিস, শ্বাসকষ্ট, অস্থিসন্ধিতে পরিবর্তন দেখা দেয়া। তাই যাদের ওজন ইতিমধ্যে বেড়ে গেছে তাদের ওজন নিয়ন্ত্রণের আকাঙ্খা তৈরী করতে হবে, ইচ্ছাশক্তি থাকতে হবে। ওজন কমানোর বিভিন্ন ধরনের পদ্ধতির কথা আমরা জানি, কিন্তু খুব সহজ লভ্য একটা সবজি দিয়েও যে আমরা ওজন নিয়ন্ত্রনে রাখতে পারি সে বিষয়ে আজ জানবো।
টমেটো একটা সুস্বাদু ও পুষ্টিকর সবজি। এখন সারা বছরই টমেটো পাওয়া যায়। এতে রয়েছে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, ফলেট ও পটাসিয়াম। বিজ্ঞানীদের মতে, শরীরের পুষ্টির জন্য যা যা দরকার তা টমেটোতে প্রচুর পরিমানে রয়েছে। টমেটো ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং ত্বক ও চুলের জন্যও উপকারী। কিন্তু টমেটো যে চর্বি কমিয়ে দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করতে পারে তা হয়তো অনেকেরই অজানা।
প্রতি ১০০ গ্রাম টমেটোতে আছে ০.৯ গ্রাম আমিষ, ৩.৬ গ্রাম শর্করা, ০.৮ মি. গ্রাম আঁশ, ০.২মি. গ্রাম চর্বি, ২০ কিলোক্যালরি শক্তি, ৪৮ মি. গ্রাম ক্যালসিয়াম, ২০ মি. গ্রাম ফসফরাস, ০.৬৪ মি. গ্রাম লৌহ, ৩৫১ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিন ও ২৭ মি. গ্রাম ভিটামিন সি। প্রতি ১০০ গ্রাম টমেটোতে আছে ০.৯ গ্রাম আমিষ, ৩.৬ গ্রাম শর্করা, ০.৮ মি. গ্রাম আঁশ, ০.২মি. গ্রাম চর্বি, ২০ কিলোক্যালরি শক্তি, ৪৮ মি. গ্রাম ক্যালসিয়াম, ২০ মি. গ্রাম ফসফরাস, ০.৬৪ মি. গ্রাম লৌহ, ৩৫১ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিন ও ২৭ মি. গ্রাম ভিটামিন সি। পুষ্টিবিজ্ঞানের তথ্যানুসারে ওজন নিয়ন্ত্রনে টমেটো কিভাবে কার্যকর তা নিচে উল্লেখ করা হলো:
- টমেটোতে প্রচুর পরিমানে সলিউবল ও ইনসলিউবল ফাইবার থাকে যা ওজন নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত গুরুত্ত¡পূর্ণ।
- টমেটো অত্যন্ত নিম্ন ক্যালরীযুক্ত হওয়াতে এতে পানির পরিমান বেশী থাকে, যা উচ্চ দ্রবনীয় ও অদ্রবনীয় দুইরকম আশ সর্মদ্ধ ফলে ওজন কমাতে সাহায্য করে।
- টমেটোতে রয়েছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট লাইকোপেনে যা কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। গবেষণায় দেখা যায় যে, লাইকোপেনে প্রাকৃতিকভাবে মেটাবলিজম নিয়ন্ত্রণ করে, এর ফলে শরীরের চর্বি ঝরে ওজন দ্রæত কমে।
- খাদ্য তালিকায় কাঁচা টমেটো দিনে ৪/৫ টা রাখলে শরীরে কোলেসিসটোকিনিন নামে এক ধরনের হরমোন নি:সৃত হয় যা পেটের এবং ইনটেস্টাইনের মধ্যে যে ভালব রয়েছে তা সংকুচিত করে দেয়। ফলে ক্ষুধা কম লাগে তাতে ওজন বাড়ার সম্ভাবনাও কম থাকে।
- টমেটোতে গøাইসেমিক ইনডেক্স লো থাকে, ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা যেমন বাড়ে না, তেমনি ইনসুলিনের প্রভাবে শরীরে মেদ জমে না।
- গবেষকদের মতে, টমেটো শরীরে কারনিটাইন নামক অ্যামাইনো এসিড তৈরী করে যা শরীরের মেদ ঝরাতে সাহায্য করে।
- টমেটো আঁশ/ফাইবারে ভরপুর, তাই এটি হজম প্রক্রিয়ায় ব্যাপক ভূমিকা রাখে।
- পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন কে থাকায় টমেটো হাড়ের টিস্যু ঠিকঠাক রাখতে ও ছোটখাট হাড় সংক্রান্ত সমস্যা দূর করে থাকে।
- টমেটোতে রয়েছে কোমেরিক অ্যাসিড ও ক্লোরোজেনিন অ্যাসিড যা ধূমপানের ফলে শরীরের যে ক্ষতি হয় তার প্রভাব কমাতে সাহায্য করে।
- অনেক সময় ক্ষুধা লাগলে আমরা অনেকেই সিঙ্গারা, সমুচা, বার্গার খেয়ে পেট ভরিয়ে থাকি, এতে কওে ওজন বাড়তে থাকে। এসব না খেয়ে যদি আমরা দুইটা টমেটোর সালাদ খেয়ে থাকি তাহলে শরীর ফিট থাকবে। দূষণের এই সময়ে টমেটোর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট শরীরের ভেতর থেকে জীবানুমুক্ত রাখবে।
টমেটো ওজন নিয়ন্ত্রণ ছাড়াও শরীরের বেশকিছু গুরুত্ত¡পূর্ণ উপকার করে থাকে। যেমন –
ডায়াবেটিস ও কিডনির সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে তাছাড়া রোগ প্রতিরোধে কার্যকরী।
যারা সবসময় দুর্বল থাকেন বা রোগা থাকেন তারা দিনে দুইবার নিয়ম করে টমেটো খেলে উপকার পাবেন।
চর্মরোগীদের জন্যও টমেটো খুবই উপকারী।
নিয়মিত টমেটো খেলে পাকস্থলী ও অন্ত্র সুস্থসবল থাকে।
ক্ষুধা কম লাগা ও মুখে অরুচি হলে টমেটো টুকরো টুকরো করে কেটে তাতে শুকনো আদার গুড়ো সামান্য মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়।
অর্শ্ব, জন্ডিস ও পুরানো জ্বর আছে যাদের তারা নিয়মিত টমেটো খেলে উপকার পাবেন।
গর্ভবতী মা ও যাদের বাচ্চা রয়েছে তারা নিয়মিত টমেটো খেলে তাদের শারীরিক ও মানসিক শক্তি বাড়বে। যা মা ও বাচ্চার জন্য উপকারী।
হজম কম হওয়া ও পেটে গ্যাস হলে টমেটোতে উপকার মেলে।
বাচ্চাদের দিনে দুই থেকে তিনবার টমেটোর রস খাওয়ালে বাচ্চারা সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হবে।
নিয়মিত টমেটো খেলে ত্বক সুস্থ তাকে, ত্বক হয়ে উঠে প্রানবন্ত। সূর্যের ক্ষতি থেকে ত্বককে রক্ষা করে এবং ত্বকে বলিরেখা পরার প্রবনতা কমে যায়।
হৃদপিন্ডের বর্ণের সাথে টমেটোর মিল লক্ষ্য করা যায়। মানবদেহের হৃদপিন্ডের ন্যায় টমেটোতেও চারটি প্রকোষ্ঠ রয়েছে। টমেটো হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর। এটি মহান আল্লাহ তায়ালার এক অপূর্ব দান, এর উপকারিতার শেষ নাই। নিয়মিত টমেটো খেলে চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন হয়না। এখনকার কর্মব্যস্ত জীবনে যেকোন সময়ে আমাদের শরীরে পেয়ে বসে অবসাদ ও বিষণœতা, টমেটো খেলে এই বিষণœতা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তাই ওজন নিয়ন্ত্রণ ছাড়াও শরীরের সার্বিক কল্যাণে আমরা চোখ বন্ধ করে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় টমেটো রাখতে পারি।
লেখিকাঃ নুরস্বেত জাহান নূপুর