
মোঃ জাহিদ হাসান মিলু, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি: সীমান্তবর্তী জেলা ঠাকুরগাঁও। হিমালয়ের কাছাকাছি এই জেলার অবস্থান হওয়ায় দেশের অন্যান্য জেলার তুলনায় এই জেলা তুলনামূলকভাবে শীতের প্রকোপ বেশি। কার্তিকের মাঝামাঝি সময় থেকেই জেলায় রাতে ও ভোরে হালকা কুয়াশার সাথে কৃষ্ণচূড়ার পাতায় ও দুর্বা ঘাসের মাথায় শিশির বিন্দু দেখা যায়। তবে হটাৎ করে গত কয়েকদিন ধরে রাত থেকে দিনের প্রথমভাগ ঘন কুয়াশায় ঢাকা থাকছে ঠাকুরগাঁও।
তবে নভেম্বরের শুরুতেই মৃদু শীতের আগমন হয় এই জেলায় কিন্তু গত ২৩ নভেম্বর হটাৎ করে সন্ধ্যা থেকে বেড়ে যায় ঘন কুয়াশা ও শীতের প্রকোপ। রাতে শীতের সঙ্গে কুয়াশা আর বেলা বাড়লে রোদ্রউজ্জ্বল সূর্যের আলো। সন্ধ্যায় হিমেল হালকা বাতাস। রাত যতো গভীর হয় কুয়াশা ও শীতের প্রকোপ ততোই বাড়তে থাকে। দিনের প্রথমভাগ কুয়াশার চাদরেই ঢাকা থাকে এই জেলা। দিনের পূর্বাহ্ন শেষে মধ্যাহ্ন শুরুতে কুয়াশা ভেদ করে আকাশে উঁকি দেয় সূর্য। কুয়াশার কারণে দিনের বেলায় যানবাহনগুলো হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে। গত কয়েকদিন ধরে জেলার বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে দেখা যায় এমন দৃশ্য।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার প্রত্যান্ত গ্রাম অঞ্চলের দরিদ্র হোসেনা বেগম শীতকে ঘিরে শীতবস্ত্র পাওয়ার আকুতি জানান। অন্যদিকে একই উপজেলার মজিবর রহমান গরম কাপড় পাওয়ার জন্য সরকারকে বিনীত অনুরোধ করে বলেন, গরিব দুখিরা আমরা সবাই যেন শীত নিবারণ করতে পারি তাই যেন শীতবস্ত্রের ব্যবস্থা করে দেন সরকার। অন্যদিকে ঠাকুরগাঁও সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী জয়শ্রী জয়া বলেন, গত দুই দিন থেকে জেলায় ঘন কুয়াশা ও শীতের প্রকোপ বেড়েছে। এতে প্রায় সকাল ১১ টা পর্যন্ত ভালোভাবে সূর্য্যরে আলো দেখা যায় না।
জেলায় আবহাওয়া অধিদপ্তর না থাকায় তাপমাত্রা পরিমাপের কাজটি করেন জেলা কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তর। তার পরেও আবার তাপমাত্রা পরিমাপের মেশিনটি নষ্ট। এ কারণে তাপমাত্রা পরিমাপ করতে তাদের অনেক বেগ পেতে হচ্ছে বলে জানান, জেলা কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবীদ আবু হোসেন। তিনি জানান, এ সপ্তাহে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা পরিমাপ করা হয় ১৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস।
এছাড়াও হাসপাতাল গুলোতে বেড়েছে শীত সংক্রামক শিশু রোগীর সংখ্যা। ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের সূত্রমতে, গত ২৪ নভেম্বরে ঠান্ডাজনীত কারণে ১’শ ২৪ জন শিশু রোগী ভর্তি হন। এদের মধ্যে ৪২ জন নিউমোনিয়া ও ৩৭ জন ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়।
ঠাকুরগাঁও শহরের বীর মুক্তিযোদ্ধা নরেন্দ্র নাথ সরকার এবার শীতের প্রকোপ বেশী হওয়ার সম্ভাবনার কথা জানিয়ে বলেন, ছিন্নমূল অসহায় ও রাস্তা ঘাটে শুয়ে থাকা মানুষদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়। তাই জেলা প্রশাসন যেন শীতবস্ত্র সুষ্ঠ ও সঠিকভাবে বিতরণ করেন এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় এবার এ পর্যন্ত ২৬ হাজার ৩’শ কম্বল ও শীতবস্ত্র ক্রয়ের জন্য নগদ ৮ লক্ষ টাকা বরাদ্দ এসেছে।
ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান জানান, ইতিমধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ শুরু করা হয়েছে। যেহেতু প্রতি বছর ঠাকুরগাঁওয়ে শীতের প্রকোপ বেশি হয় তাই সরকারের কাছে চাহিদা অনুযায়ী আরও ১ লক্ষ কম্বল ও ২৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।
ঊষার বাণী / জে এইচ / ২৮ নভেম্বর ২০২১