
ঊষার বাণী ডেস্ক : ২৫ অক্টোবর ২১
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দেশে বেড়েছে ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা। সেইসঙ্গে বেড়েছে কৃত্রিম ক্রিকেট পিচের চাহিদাও। এই চাহিদার বড় অংশ মেটে পিরোজপুরের স্বরূপকাঠিতে তৈরি কৃত্রিম ক্রিকেট পিচে।
পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ উপজেলায় বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের আওতায় অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যা থেকে প্রতি বছর উদ্যোক্তা গড়ে তোলে বিসিক। সেখানেই তৈরি হচ্ছে কৃত্রিম ক্রিকেট পিচ।
কৃত্রিম এই ক্রিকেট পিচ তৈরির মূল উপাদান নারিকেলের ছোবড়া। এই ছোবড়া থেকে দড়ি তৈরি করে সেই দড়ি দিয়ে কৃত্রিম পিচ প্রস্তুত হয়, যা এখন পিরোজপুর জেলার চাহিদা মিটিয়ে সারা দেশের চাহিদা মেটাতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।
প্রায় ৫০ বছর ধরে ক্রিকেট খেলার উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দু মাঝ মাঠের পিচ তৈরি করছেন পিরোজপুরের স্বরূপকাঠির একদল কারুশিল্পী। তাদের এই কুশলতা রয়ে গেছে প্রায় লোকচক্ষুর অন্তরালে।
শক্ত মাটি দিয়ে বানানো সাধারণ ক্রিকেট পিচে সাধারণত বৃষ্টির মৌসুমে খেলা হয় না। তখন ম্যাচ বা অনুশীলন চলে কৃত্রিম পিচে। একসময় দেশে ব্যবহার হতো বিদেশে তৈরি কৃত্রিম পিচ। এক পর্যায়ে স্বরূপকাঠির একজন উদ্যোক্তা একদল কুটির শিল্পী নিয়ে তৈরি করতে শুরু করেন কৃত্রিম পিচ, যার প্রধান উপকরণ স্থানীয় নারিকেলের ছোবড়া।
জানা যায়, প্রায় পাঁচ দশক আগে স্বাধীনতারও আগে স্বরূপকাঠির সুটিয়াকাঠি ইউনিয়নের বেলতলা গ্রামজুড়ে ছিল নারিকেলকেন্দ্রিক কুটির শিল্প। তখন নারিকেলের ছোবড়া দিয়ে মূলত পাপোশ বানানো হতো। একসময় অনেকটা বিশাল পাপোশের আদলেই এখানে ক্রিকেট খেলার পিচ বানানো শুরু হয়।
কৃত্রিম পিচ তৈরির প্রতিষ্ঠান ‘দ্য পিপলস কয়ার ইন্ডাস্ট্রিজ’-এর উদ্যোক্তা মো. মহিউদ্দিন (তোতা মিয়া) প্রায় ৪৫ বছর ধরে ঢাকার ক্রিকেট ক্লাবগুলোতে কৃত্রিম পিচ সরবরাহ করে আসছেন। তার কাছ থেকে জানা যায়, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড ও জাতীয় দলের ইনডোর প্র্যাকটিসের জন্য তার প্রতিষ্ঠানের তৈরি করা পিচ ব্যবহার করা হয়।
কৃত্রিম পিচ তৈরির কাজে কর্মরত দুই শ্রমিক মো. মাছুম খান ও আব্দুল কাদের বলেন, এখানে আমরা নারিকেলের ছোবড়ার মাধ্যমে বিভিন্ন কাজ করে থাকি। ক্রিকেট মৌসুম, মানে ঘরোয়া লিগ/কাপ খেলার প্র্যাকটিসের জন্য কৃত্রিম পিচ বেশি প্রয়োজন হয়, যা সম্পূর্ণ নারিকেলের ছোবড়া দিয়ে তৈরি করি।
তারা আরো বলেন, এগুলো তৈরি করে মোটামুটি লাভ হয়। পাপোশের কাঁচামাল আমরা বাজার থেকে কিনে আনি। তারপর কারখানায় তৈরি করে এগুলোকে বিভিন্ন জায়গায় সাপ্লাই দেই। ১৫-২০ বছর যাবৎ আমাদের এই কারবার চলছে। এ দিয়েই আমাদের সংসারাদি চলে।
দ্য পিপলস কয়ার ইন্ডাস্ট্রিজ-এর উদ্যোক্তা মো. মহিউদ্দিন (তোতা মিয়া) বলেন, তার কারখানায় তৈরি করা ক্রিকেট ম্যাট দেশের বিভিন্ন জায়গায় যায়, যার যেখানে যেমন প্রয়োজন হয়। বর্তমানে একটি ম্যাটের দাম ৩৩-৩৬ হাজার টাকার মতো।
প্রস্তুত প্রণালি সম্পর্কে তিনি বলেন, নারিকেলের ছোবড়া সংগ্রহ করি বাগেরহাট থেকে। এখানে রশি পাকিয়ে তারপর ম্যাট তৈরি হয়। একটি ম্যাটে ৩-৪ জন কাজ করে। ৩৮ বছরের ব্যবসা, মোটামুটি চলে যায়। একটা ম্যাট ৭-৮ বছর ব্যবহার করা যায়। বছরে ২৫-৩০টা ম্যাট চলে।
শুধু বাণিজ্যিক বিবেচনা থেকে নয়, স্বরূপকাঠির ঐতিহ্য হিসেবে এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখার তাগিদ বোধ করেন পিপলস কয়ার ইন্ডাস্ট্রিজের তোতা মিয়া। তিনি প্রত্যাশা করেন সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতার।
কৃত্রিম পিচ তৈরির সময় কাঠির মাথায় কাতরা রশি লাগিয়ে তা পৌঁছে দেওয়া হয় অপর প্রান্তের কর্মীর হাতে। তিনি তা নির্দিষ্ট স্থানে বসিয়ে দেন। এই কাজের সময় টানটান সুতা থেকে বাতাসে ওঠে মধুর টংকার ধ্বনি।
৬৬ ফুট দৈর্ঘ্যরে একটি পিচ তৈরি করতে অন্তত ১০ থেকে ১৩ হাজার টাকার কাতরা লাগে। একটি পিচ তৈরি করতে ৪ জন শ্রমিককে অন্তত টানা ছয় দিন কাজ করতে হয়। সব মিলিয়ে একটি পিচ তৈরিতে ২২-২৫ হাজার টাকার মতো খরচ হয়।
ঊষার বাণী / জে এইচ / ২৫ অক্টোবর ২১